Tuesday, 21 June 2016

২০১৬ সালের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার প্রস্তুতি বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়

 সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর প্রিয় শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়ের অধ্যায়-৮ থেকে একটি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তরের নমুনা দেওয়া হলো। অধ্যায়-৮ thumbnail 1 summary
 সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
প্রিয় শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়ের অধ্যায়-৮ থেকে একটি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তরের নমুনা দেওয়া হলো।
অধ্যায়-৮

তিন বন্ধু সকালে হাঁটতে বেরিয়েছে। রাস্তা দিয়ে হাঁটছে। হঠাত্ তারা একটা দুর্গন্ধ অনুভব করল। তাকাতেই দেখল পাশের খাল দিয়ে ময়লা ও পচা আবর্জনা ভেসে যাচ্ছে। তখন এক বন্ধু আরিফ বলল, এটি একটি সুন্দর খাল ছিল। ছোটবেলায় এখানে মাছ ধরতাম। গোসল করতাম। এখন এসব স্বপ্ন বলে মনে হয়। রাস্তা পেরিয়ে মাঠের কাছে যেতেই আকাশজুড়ে ইট ভাটার কালো ধোঁয়া দেখে আরেক বন্ধু রিপন বলল, এখানে অনেক জায়গাজুড়ে বাগান ছিল। এখানে ছিল ফুরফুরে বাতাস। এখন আর এসব কিছু নেই। তৃতীয় বন্ধু হাসিব আফসোস করে বলল, বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়িয়ে আমরা নিজেদের ক্ষতি নিজেরাই করছি।
ক. ‘গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া’ কী?
খ. বর্তমান বিশ্বে ব্যাপক হারে নগরায়ণ হচ্ছে। এর সঙ্গে সঙ্গে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে কেন?
গ. উদ্দীপকে তিন বন্ু্লর আলোচনায় কোন বিষয়টি ফুটে উঠেছে, বুঝিয়ে বলো।
ঘ. উদ্দীপকে তিন বন্ধুর কথার ভেতরে যে বিষয়টি অন্তর্নিহিত রয়েছে, তার জন্য মূলত কারা দায়ী? বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: ক
‘গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া’ হলো বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের সঞ্চয় বেড়ে যাওয়ার কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ক্ষতিকর পর্যায়ে বৃদ্ধি পাওয়া।
উত্তর: খ
বর্তমান বিশ্বে ব্যাপক হারে নগরায়ণের ফলে মানুষ কাজের খোঁজে শহরে ভিড় জমাচ্ছে। ফলে শহরে জনসংখ্যা ও যানবাহনের চাপ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। এই যানবাহন থেকে বের হচ্ছে বিষাক্ত কালো ধোঁয়া কার্বন ডাই-অক্সাইড। আরও রয়েছে কলকারখানার কালো ধোঁয়া। এসব গ্যাসের কারণে বায়ুমণ্ডলের উত্তাপ ক্রমেই বাড়ছে। তাই ব্যাপক হারে নগরায়ণের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান বিশ্বে বৈশ্বিক উষ্ণতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উত্তর: গ
উদ্দীপকে তিন বন্ধুর আলোচনায় খাল, বিল, নদীর পানিতে ময়লা-আবর্জনা ফেলা, ইটের ভাটা ও শিল্পকারখানা থেকে বিষাক্ত কালো ধোঁয়া, বন উজাড়করণের কথা ফুটে উঠেছে; যা পরিবেশদূষণের মাধ্যমে বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়িয়ে তুলছে। বিশ্বের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে মহাসমুদ্র, নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সমুদ্রে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য নিক্ষেপ করার ফলে তা দূষিত হচ্ছে। এই দূষিত বাষ্প বাতাসে মিশে ওজোন স্তরের ক্ষতি করছে।
এ ছাড়া অনেক নদী ও খাল বর্জ্য ফেলার কাজে ব্যবহূত হচ্ছে। বর্তমান বিশ্বে ব্যাপক হারে নগরায়ণের ফলে কাজের খোঁজে মানুষ শহরে ছুটছে। ফলে শহরে বাড়ছে জনসংখ্যার চাপ, বাড়ছে রকমারি যানবাহনের সংখ্যা। এসব যানবাহনের নির্গত কালো ধোঁয়া, ইটের ভাটা ও শিল্পকারখানার কালো ধোঁয়া বায়ুতে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে আমাদের জীবন হুমকির সম্মুখীন।
সবুজ উদ্ভিদ বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে এবং আমাদের জন্য অক্সিজেন ত্যাগ করে। কিন্তু ব্যাপক হারে বৃক্ষ নিধন বা বন উজাড়করণের ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে গেছে। ফলে বায়ুমণ্ডলের তাপধারণকারী সিএফসি গ্যাস অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
উত্তর: ঘ
উদ্দীপকে তিন বন্ধুর কথার ভেতরে যে বিষয়টি অন্তর্নিহিত রয়েছে, তা হলো বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি। এর জন্য মূলত মানুষ দায়ী। তাদের সৃষ্ট কর্মকাণ্ডের ফলেই বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা যেসব দ্রব্য ব্যবহার করি যেমন—রেফিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনার, প্লাস্টিক, ফোম, অ্যারোসল প্রভৃতির ফলে বায়ুমণ্ডলে উত্পাদিত হচ্ছে একধরনের গ্রিনহাউস গ্যাস (এইচসিএফসি)। এই গ্যাসের কারণে বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ওজোন স্তর সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে পৃথিবীর জীবজগেক রক্ষা করে। ওজোন স্তর ক্ষয়ের কারণে ভূপৃষ্ঠের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব শতকরা পাঁচ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে জীবজগত্ কঠিন বিপদের সম্মুখীন।
পৃথিবী থেকে জীববৈচিত্র্য দিন দিন হারিয়ে যেতে শুরু করেছে। মরুকরণ শুরু হয়েছে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলো অধিক হারে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে পরিবেশ নষ্ট করছে। তা ছাড়া এসব দেশ পারমাণবিক চুল্লি ব্যবহার করে, যা থেকে প্রচুর বর্জ্য সৃষ্টি হয়। এই বর্জ্য গ্রিনহাউস গ্যাস সৃষ্টি করে। শিল্পকারখানার বর্জ্য ও কালো ধোঁয়া থেকেও প্রচুর পরিমাণে পারদ, সিসা, আর্সেনিক নির্গত হয়।
সুতরাং, উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যমে এটা আমাদের কাছে পরিষ্কার যে পরিবেশ বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি। এর জন্য মানবসৃষ্ট কর্মকাণ্ডই দায়ী। উদ্দীপকে তিন বন্ধুর আলোচনার ভেতর দিয়ে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী মানুষের কর্মকাণ্ড—এই নির্যাসটাই বেরিয়ে এসেছে।

No comments

Post a Comment